পানামা খাল

পানামা খালের অবস্থান-

১। 1-Panama (1)


২। 2-Panama

৩। 3-Panama

৪। 4- panama

পানামা সিটি মধ্য আমেরিকার ক্ষুদ্র রাষ্ট্র পানামার রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর। পানামার কেন্দ্রীয় উপকূল-ভাগে পানামা খালের যে প্রান্ত প্রশান্ত মহাসাগরের সাথে সংযুক্ত সেখানেই পানামা সিটির অবস্থান। আমেরিকা মহাদেশের সবচাইতে সরু অংশে অবস্থিত হওয়ায় এই শহরের নিকট দিয়েই আটলান্টিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনের কাজ চলে। ষোড়শ শতাব্দীতে এই শহরের পত্তনের পর থেকেই এই প্রক্রিয়া চলে আসছে। পানামার রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য এবং শিল্পোৎপাদনের কেন্দ্রও এই শহর। এর আবহাওয়া সামুদ্রিক ক্রান্তীয় ধরনের। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শুষ্ক-কাল এবং মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ষাকাল থাকে। এখানকার দৈনিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গড়ে ৩০° সেন্টিগ্রেড (৮৭° ফারেনহাইট) এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৩° সেন্টিগ্রেড (৭৩° ফারেনহাইট)।

খালের ব্লক এর গেট-

৫। 5- Panama

ইতিহাস

মূল পানামা সিটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৫১৯ সালে। সেই অঞ্চলের স্পেনীয় উপনিবেশের গভর্নর Pedrarias Davila এই শহরের পত্তন করেন। দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষত পেরুতে অবস্থিত ইনকাদের রাজত্বে অভিযান পরিচালনা করার জন্য স্পেনীয় বাহিনী এই নগরকে একটি ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতো। অতি শীঘ্রই ইউরোপীয় উপনিবেশের সাথে দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলের মধ্যে মানুষ ও মালামাল পরিবহনের জন্য এই শহরটি জনপ্রিয় হয়ে উঠে। পরিবহন-কৃত মালামালের মধ্যে প্রধান ছিল, পেরু থেকে আনা রূপা। স্পেনীয়রা এই পানামা যোজকে জাহাজ দিয়ে এই রুপা স্পেনে নিয়ে যেতো। ১৬৭১ সালে ওয়েলসের জলদস্যু হেনরি মরগান এই আদি শহরটি (যার নাম পানামা ভিয়েজো বা পুরাতন পানামা) লুট করার পর ধ্বংস করে দেয়। স্পেনীয় কর্মকর্তারা দুই বছর অপেক্ষাকৃত নিরাপদ এবং প্রতিরক্ষার উপযোগী একটি স্থানে শহরটি পুনরায় নির্মাণ করে। প্রথমোক্ত স্থান থেকে এই নতুন স্থানের দূরত্ব ৮ কিলোমিটার এবং নতুন স্থানটি একটি উপদ্বীপ।

৬। Panama (1)

৭। Panama (2)

১৭০০ শতাব্দীতে স্পেনীয়রা বাণিজ্যের জন্য অন্যান্য পথ ব্যবহার করতে থাকায় পানামা সিটির বিশেষ অবনতি ঘটে। কিন্তু ১৮৫০-এর দশকে ক্যালিফোর্নিয়া গোল্ড রাশ এবং পানামা রেলপথ নির্মাণের পর পানামা সিটির মধ্য দিয়ে যাতায়াত বৃদ্ধি পায় এবং শহরটি পুনরায় উন্নত হিসেবে গড়ে উঠে। এসময় পানামা কলম্বিয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং পানামা সিটি পানামা অঞ্চলের রাজনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত হতো। ১৯০৩ সালে যখন পানামা কলম্বিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করে তখন পানামা সিটি এই নতুন দেশের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯০৪ থেকে ১৯১৪ সালের মধ্যে পানামা খাল খননের সময় আবার পানামা সিটিতে উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টি হয়ে। খাল খনন প্রকল্পের আওতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা এই শহরে অত্যাধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন ও জল বণ্টন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে যাতে রোগ বালাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

খাল এবং বিবরণ

৮। Panama (2)

পানামা খাল, আমেরিকা মহাদেশের উত্তর ও দক্ষিণ ভূখণ্ডকে সংযোগকারী পানামা প্রণালীতে, জাহাজ পারাপারের নিমিত্তে তৈরি একটি কৃত্রিম খাল। যা আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরকে সংযুক্ত করে দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছে অনেক খানি।

পৃথিবীতে যত  ইঞ্জিনিয়ারিং আছে এটি তার মধ্যে অন্যতম। পাহাড়ের মাঝ দিয়ে হ্রদের মনোরম দৃশ্য এবং পাহাড়ের উপরে দিয়ে জাহাজ পার করা এক অবাক বিস্ময় যা নিজে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা বা বোঝা অতি কঠিন ব্যাপার।

পানামা খাল ও সুয়েজ খাল বিশ্বের অতি গুরুত্বপূর্ণ দুটি কৃত্রিম জলপথ। তবে এর মধ্যে পানামা খাল সুয়েজ খাল অপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও বিখ্যাত। পানামার ইস্থমাসের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে আটলান্টিক মহাসাগরের মিলন ঘটিয়েছে।

খালটির উভয় প্রান্তে ২টি ছোট সমুদ্র সমতল ভাগ এবং তিন জোড়া গেট আছে, যেগুলো জাহাজকে সমুদ্র সমতল থেকে ৩২ মিটার (প্রায় ১০৫ ফুট) উপরে তুলে দেয়। এখানে ৩২ মাইল অতি প্রশস্ত ভাগ আছে, যার মধ্যে গাট্টন লেক ও গাইলার্ডকাট নামে আট মাইল দীর্ঘ অপ্রশস্ত চ্যানেল আছে। এর ভিতর দিয়ে মাঝারি সাইজের যে কোন জাহাজ চলাচল করতে পারে। বর্তমানে বৃহৎ আকারের কন্টেইনার জাহাজ, দ্রুতগতির যুদ্ধ জাহাজ ও ট্যাংকার চলাচল নিশ্চিত করতে এক বছর আগে খালটি প্রশস্ত করার জন্য তৃতীয় পর্যায়ে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ২০১৪ সালের আগস্টে খালটির ১শ’ তম বার্ষিকীর আগে ওই নির্মাণ কাজ শেষ হবে।

৯। Panama (3)

সমুদ্রপথ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী পানামা খালের দৈর্ঘ্য ৬৫ কিমি. গভীরতা ১২ থেকে ১৫ মিটার এবং তলার প্রস্থ ৩০ থেকে ৯০ মিটার।  এটি খননের ফলে পথের দূরত্ব কমিয়ে জাহাজের চলাচলের পথ অনেক কমিয়ে দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে জাহাজগুলো প্রায় ৮,০০০ নটিক্যাল মাইল হ্রাস পেয়েছে। উত্তর আমেরিকার উপকূল থেকে দক্ষিণ আমেরিকার অপর দিকের বন্দরে যেতে প্রায় ৩৫০০ মাইল দূরত্ব কমে গেছে। যেসব জাহাজ ইউরোপ, পূর্ব এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া যাতায়াত করে সেগুলো এ খাল টির সুযোগ নিয়ে প্রায় ২,০০০ মাইল দূরত্ব কমিয়ে ফেলেছে।

( ১ স্ট্যাটিক মাইল=৫২৮০ ফুট এবং ১ নটিক্যাল মাইল =৬০৮০ ফুট)।

১০। Panama (4)

সুয়েজ খালের চেয়েও অনেক কঠিন ছিল পানামা খাল নির্মাণ করার কাজ। সুয়েজ খাল তৈরি করার সময় পরিশ্রম ও অসুখে বহু শ্রমিক মারা যান। পানামা খালেরও সে রকম অশ্রুসিক্ত ইতিহাস আছে যার সব্টা আমার পরিষ্কার মনে নেই তবে এটা অনেকের আছে এক অজানা অধ্যায়। প্রথমে ফরাসিরা পানামা খাল তৈরির কাজে হাত দেয়। কিন্তু তারা সুবিধা করতে পারেনি। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে আসে। পানামা দেশটিকে কলম্বিয়ার অধীনতা থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করার বিনিময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পানামা খাল নির্মাণের দায়িত্ব ও এর নিয়ন্ত্রণ হাতিয়ে নেয়। পানামা স্বাধীন দেশ বলে পরিচিত হলেও পানামা খাল এলাকার নিয়ন্ত্রণ থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। সেই ১৯১৪ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত পানামা খাল এলাকায় মার্কিন সৈন্যরা নিয়োজিত ছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ও পানামার প্রেসিডেন্ট টোরিনোসের মধ্যে এক চুক্তি অনুযায়ী ১৯৯৯ সালে মার্কিন সৈন্যরা পানামা খালের কর্তৃত্ব পানামা সরকারের কাছে হস্তান্তর করে।

১১। Panama (5)

মার্কিন সৈন্যরা পানামা খাল ছেড়ে যাওয়ার পর বহু পানামা বাসী মন্তব্য করেছিলেন, ‘এবার আমরা প্রকৃতপক্ষে পূর্ণ স্বাধীনতার স্বাদ পেলাম।’

১৯১৪ সালে নির্মিত হয় পানামা খাল। ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ওই খালটি যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে ছিল। একই বছরে পানামা-যুক্তরাষ্ট্র যৌথ প্রশাসনের অধীনে আসে খালটি। ১৯৯৯ সালে ওই খালটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় পানামার সরকার। বিশ্বের মোট নৌবাণিজ্যের ৫% পানামা খাল দিয়ে সম্পন্ন হয়।

খালটি শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ জাহাজ পারাপার হয়েছে। এর মাধ্যমে পানামা প্রতি বছর ৭০ থেকে ৮০ কোটি মার্কিন ডলার রাজস্ব আয় করে।

১২। Panama Canal in Panama-Picture of Panama Canal tourism destinations

গাট্টন হ্রদে জাহাজ উঠাতে ও নামাতে অনেক সময় লাগে তাই এ খালটি পার হতে প্রায় ১৫ ঘণ্টার মত সময় লাগে৷ এ খাল দিয়ে প্রতি বছর প্রায় ৬০০০ জাহাজ চলাচল করে এবং এ পথে চলাচলকারী জাহাজগুলোর ৫৫% মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের৷ এ পথ দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫০/৬০টি জাহাজ চলাচল করে৷

২০০৮ সালে পানামা খাল পারাপার করেছে ১৪ হাজার ৭০২টি জাহাজ।

২০০৯ সালে টোল বাবদ পানামা খাল থেকে সে দেশের আয় হয়েছে প্রায় দুই বিলিয়ন (দুইশ’ কোটি) মার্কিন ডলার। খাল এলাকায় কর্মসংস্থান হয়েছে বহু মানুষের। আধুনিক দুনিয়ার একটি প্রকৌশল বিস্ময় হিসেবে পরিচিত এবং সুয়েজ খালের মতোই বিশ্বে নৌচলাচল ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দেওয়া পানামা খাল দেখতে বহু পর্যটক যান সারা বছর। চলুন না আমরাও ঘুরে আসি!

১৩। Panama (7)

পানামার দৈর্ঘ্যও প্রায় ৮২ কিলোমিটার (৫১ মাইল), খালটির উভয় প্রান্তে ২টি ছোট সমুদ্র সমতল ভাগ আছে। তিন জোড়া জলকপাট আছে, যেগুলো জাহাজকে সমুদ্র সমতল থেকে ৩২ মিটার উপরে তুলে দেয়। এখানে ৩২ মাইল অতি প্রশস্ত ভাগ আছে, যার মধ্যে গাট্টন লেক ও গাইলার্ডকাট নামে আট মাইল দীর্ঘ অপরিসর চ্যানেল আছে, যা মহাদেশীয় বিভাজিকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। এর লক চেম্বারটির পরিসরের যে মাপ (১০০০ ফুট দৈর্ঘ্য, ১১০ ফুট প্রস্থ, ৪১ ফুট বেধ) তাতে তার মধ্য দিয়ে বাণিজ্য জাহাজ এবং নৌ-জাহাজগুলো চলাচল করতে পারে। কেবল বড় বড় জাহাজ এতে ঢুকতে পারে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে জাহাজগুলো প্রায় ৮,০০০ নটিক্যাল মাইল দূরত্ব সংক্ষেপ করতে সক্ষম হয়েছে। উত্তর আমেরিকার উপকূল থেকে দক্ষিণ আমেরিকার অপর দিকের বন্দরে যেতে প্রায় ৩৫০০ মাইল দূরত্ব কমে গেছে। যেসব জাহাজ ইউরোপ, পূর্ব এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া যাতায়াত করে সেগুলো এ ক্যানেলটির সুযোগ নিয়ে প্রায় ২,০০০ মাইল দূরত্ব কমিয়ে ফেলেছে। ক্যানেলটির গেট নিয়ন্ত্রণ করা হয় গুটান লেক এবং ম্যাডেন লেক থেকে প্রবাহিত জল শক্তির সাহায্যে। গেট একই সময় জাহাজগুলোকে উভয় দিকে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে। প্রতিটি লকগেটের ৬৫ ফুট চওড়া ও ৭ ফুট মোটা কব্জা আঁটা দুটো পাল্লা আছে। কপাটগুলো ৪৭ ফুট থেকে ৮২ ফুট উঁচু হয়। মোটরের সাহায্যে একটি নিয়ন্ত্রক টাওয়ার থেকে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অপেক্ষা করার সময় ধরে খালটি অতিক্রম করতে একটি জাহাজের ১৫ ঘণ্টা সময় লাগে। কোন জাহাজ খালে প্রবেশ করার অনুমতি পেলে গভীর জলের ওপর তার চলার গড় সময় ৭-৮ ঘণ্টা। এখানে চলাচলকারী জাহাজের সংখ্যা ১৯১৬ সালে ৮০৭ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৭০ সালে ১৫,৫২৩-এ দাঁড়িয়েছে। ১৯৭০ সালে মালবাহী জাহাজ ১৩,২৫,০০,০০০ টন পরিমাণ মাল বহন করেছে। পানামা খাল নির্মাণের ইতিহাসটি খুব চমকপ্রদ। ষোড়শ শতাব্দীতে স্পেনীয়রা ইসথমাসের মধ্য দিয়ে একটি খাল কাটার পরিকল্পনা করে। ১৮৪৬-এ আমেরিকা এ বিষয়ে একটি চুক্তি সম্পাদন করে ও ১৮৫৫ সালে এ প্রকল্পের জন্য আর্থিক সাহায্য দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। সুয়েজ খালের রূপকার ফার্দিনান্দ লেসেপ্সকে প্রধান করে পানামা ক্যানেল কোম্পানি গঠিত হয়। কিন্তু ১০ বছরের মধ্যে পারিবারিক সমস্যা, প্লানের ত্রুটি, ইয়োলো ফিবার, কলেরা এবং ম্যালেরিয়ার আক্রমণে কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যায়। ১৮৯৪-এ নতুন পানামা ক্যানেল কোম্পানি ধীরগতিতে কাজ শুরু করে। ১৯০৩ সালে পানামা স্বাধীন হওয়ার পর পানামা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে হে-বুনাউ-ভারিলা চুক্তির ফলে পানামা খাল নির্মাণের দায়িত্ব আমেরিকার হাতে চলে যায়। ১৯০৪ সালে ক্যানেলের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯১৪ সালের আগস্ট এটি প্রথম জাহাজ চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

পানামার ১ লক্ষ ২০ হাজার একর অনুর্বর জমির উপর দিয়ে প্রবাহিত এই পানামা খাল। ফলে পানামা বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপূরণ এবং সেই সাথে বাৎসরিক ভিত্তিতে চুক্তি অনুযায়ী পেল প্রচুর অর্থ এতে পানামা পরিণত হল ধনী দেশে। অপরদিকে নিকারাগুয়া রয়ে গেল দরিদ্র দেশ।

সমুদ্রপথ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী অন্যতম সমুদ্রপথ পানামা খাল৷ পানামা খাল উত্তর আমেরিকার সাথে পূর্ব এশিয়া ও ওশেনিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে৷ এ খাল প্রশান্ত মহাসাগরের বাল বোয়া থেকে শুরু করে মিরাফ্লোর্স ও গাট্টন হ্রদ হয়ে ক্যারিবিয়ান উপসাগরের  গাট্টন গেটে গিয়ে পড়ে৷ এর দৈর্ঘ্য উপরিভাগে ৬৪ কিঃ মিঃ এবং দু’সমুদ্রের গভীরতম অংশ হতে প্রায় ৮০ মিঃ৷ এর গড় গভীরতা ১৫ মিটার এবং তলদেশের বিস্তার প্রায় ৯১ মিটার৷ এটি পাহাড়িয়া অঞ্চলে অবস্থিত৷ এতে মিরাফ্লোর্স নামে একটি প্রাকৃতিক হ্রদ এবং গাট্টন নামে একটি কৃত্রিম হ্রদ আছে৷  গাট্টন হ্রদের পানি সত্বর সমুদ্রের পানি হতে প্রায় ২৬ মিটার উঁচু৷ তাই শক্তিশালী বৈদ্যুতিক যন্ত্র দ্বারা জাহাজগুলোকে গাট্টন হ্রদে উঠাতে ও নামাতে হয়৷  গাট্টন হ্রদের দু’পাশে ১২টি পানি নিয়ন্ত্রণকারী গেট ও শক্তিশালী বৈদ্যুতিক যন্ত্র দ্বারা অত্যন্ত ধীরগতিতে জাহাজগুলোকে উঠানো ও নামানো হয়৷

১৯১৪ সালের ৭ জুন “ফেডারেল” নামক একটি মার্কিন মালবাহী জাহাজ পানামা খাল পার হয়ে অতলান্তিক মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে গিয়ে এই খাল পার হবার প্রথম সোভাগ্য অর্জন করেছে।

লক গেটের ব্যাবহার মূলত হয় ড্রাই ডকে । সেখানে জাহাজকে ঢুকিয়ে পাম্পের সাহায্যে পানি বের করে দেয়া হয়। এবং এটা অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার । সেখানে কিনা কোন ধরনের পাম্পের ব্যাবহার ছাড়াই একটি জাহাজকে তিনটি লকের সাহায্যে ৩২ মিটার উপরে উঠান না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন ।

আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে আছে গাট্টন লেক এবং ম্যাডেন লেক। এবং  গাট্টন লেকটি মূলত পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত। এবং এই লেকের অবস্থান সমুদ্র পৃষ্ট থেকে ৩২ মিটার উপড়ে । এধরনের পাহাড়ি লেক সংযোগকারী হিসাবে খুব ঝুঁকি পূর্ণ । কিন্তু সঠিক ইঞ্জিনিয়ারিং দ্বারা এটিকেই আশীর্বাদ হিসাবে ব্যাবহার করা হয়েছ ।

লকের ভিতর জাহাজটিকে ঢুকানর জন্য খুবই সাবধানতা অবলম্বন করা হয়। কারণ একটু এদিক ওদিক হলেই ক্ষতির সম্ভাবনা। ২০১০ সালের আগস্টে পানামা খালের ১শ’তম বার্ষিকীর ৩ বছর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর পানামা খাল অতিক্রমকারী চীনা জাহাজটির নাম ফরচুন প্লাম। এটি ছিল ইস্পাত পণ্য বোঝাই।

বর্তমানের বৃহৎ আকারের কন্টেইনার জাহাজ দ্রুতগতির যুদ্ধ জাহাজ ও তেল ট্যাংকার চলাচল নিশ্চিত করতে এক বছর আগে ক্যানেলটি প্রশস্ত করার জন্য তৃতীয় পর্যায়ে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।

এ পথে প্রতি বছর প্রায় ৬০০০ জাহাজ চলাচল করে। এ পথ দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫০/৬০টি জাহাজ চলাচল করে৷ 

জাহাজ পর্যায়ক্রমে পাহাড়ি খালে উঠছে এবং নামছে-

১৪। Panama1

১৫। Panama2

১৬। Panama3

১৭। Panama5

১৮। Panama8

১৯। Panama9

২০। Panama10

২১। Panama13

২২। Panama15

২৩। Panama16

২৪। Panama18

২৫। Panama19

সূত্র: ইন্টারনেটে বিভিন্ন সাইট থেকে সংগৃহীত তথ্য ও ছবি।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

Filed under Technology

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান